আমার সিলেট বিছানাকান্দি ভ্রমন।
তখন মেবি 2018 এর মাঝামাঝি হবে। আমি আমার ইন্টারমেডিয়েট শেষ করি ভৈরব আইডিয়াল কলেজ থেকে।
আজ আমার একটি স্বরণীয় ভ্রমন এর গল্প বর্ণনা করবো।
তো, একদিন আমি কলেজে গিয়ে দেখি সবাই সিলেটের বিছানাকান্দি যাওয়ার জন্যে প্ল্যান করছে। আমি এসব দেখেতো মহা খুশি। আবার সামনে ছিলো আমার এইচ.এস.সি এর টেস্ট পরিক্ষা। কলেজের প্রিন্সিপাল স্যার বলে ছিলো এক্সাম দেয়ার পর যেতে, তাই আর কি। এরপর স্যার বললো কলেজের সব শিক্ষক-শিক্ষিকাগণ ও যাবেন।
এরপর একটা শুভ দিন দেখে পিকনিকে যাওয়ার দিন ঠিক করা হয়। পিকনিকে যাওয়ার জন্যে সবাই মিলে একটা ফার্স্ট ক্লাস বাস ভাড়া করি। আমাদের প্ল্যান ছিলো প্রথমে হযরত শাহজালাল (রাঃ ) মাজারে যাবো । আমরা রাত ১০:৩০ ভৈরব থেকে রওনা দিই। বাস শায়েস্তাগঞ্জ নাকি কোথায় একটা ছোট রিসোর্ট এর সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। সেখানে নেমে আমরা কিছু নাস্তা করি এবং কিছু সময় বিশ্রাম নিই। কেও বাহিরে ঘুড়ে বেড়াচ্ছিলো কেও আবার ছবি তুলছিলো। সেদিন কোনো একটা কারনে আমার মন খারাপ ছিলো তাই আমি কোনো ছবি-টবি তুলিনি।
আমার সাথে ছিলো আমার ফ্রেডসরা। রাকিব (রাকিব হলো আমার কলেজের সব চেয়ে ভালো বন্ধু৷ আমরা দুইজন সব সময় এক বেঞ্চে বসতাম৷ আমার সব চেয়ে কাছের বন্ধু সে। আমি রাকিবকে এখনো অনেক মিস করি। ,
রায়হান, আরিফ (আরিফ ছিলো আমার ক্রাইম পার্টনার। আমি কোন খারাপ কাজ করলে আরিফ আমার সাথে থাকতো আরিফ ছেলেটা কিছুটা বদমাইস টাইপের ও। আমি আরিফকে অনেক মিস করি।),
Me and Arifইয়াসিন, রাব্বি, মারিয়া, সুমাইয়া (এই মেয়েটাকে আমি একটু একটু পছন্দ করতাম। এই মেয়ে সব সময় আমার পার্মিশন ছাড়ায় আমার ফোন নিয়ে নিতো। আমার ফোনে থাকা এডাল্ট ভিডিও গুলো দেখে দেখে কেটে দিতো। হ্যা, সে আগে দেখতো এর পর কেটে দিতো। ),
জান্নাত চিক্নি, জান্নাত মোটা, (এই দুই জান্নাত ছিলো আমার জীবনে পাওয়া সবচেয়ে বেস্ট গার্লফ্রেন্ড। আমি তাদেরকে ভুলতে পারবো না কখনো। যদিও এখন এদের সাথে কোন সম্পর্ক নেই৷) আরো অনেকেই ছিলো সাথে। আমি তাদের নাম ভুলে গিয়েছি। কেনো না, আমার ভুলে যাওয়ার ছোট্ট একটা রোগ আছে। তো আমরা সেই রেস্টুরেন্ট থেকে আবার আমাদের গন্তব্যের দিকে রওনা দিই।
আমরা বাসে অনেক মজা করি। সবাই বাসে নাচা নাচি করছিলো, আমার এসবে মন বসেনি। কেনো না আমি সব সময় বলে এসেছি, প্যারা নাই চিল, কিন্তু লাইফে চিল বলতে তেমন কিছু ছিলো না। তাই আমি রাকিবের থেকে ওর সাদা চশমাটা চোখে নিয়ে বাসের জানালা দিয়ে বাহিরে তাকিয়ে থাকি এবং বাহিরের পরিবেশ দেখতে দেখতে বাস যার্নি করি।
অতপরঃ, রাত সাড়ে ৩টার পর আমাদের বাস সিলেট হযরত শাহ জালাল (রাঃ) মাজারে গিয়ে থামে। এবং আমি পুরোটা মাজার ঘুড়ে ঘুড়ে দেখি। ঘুড়তে ঘুড়তে ফজরের আযান দিয়ে দেয়। এবং সেখানে আমরা সবাই ফজরের নামাজ আদায় করি। নামজের পর আমরা রওনা দিই হযরত শাহ পরান (রাঃ) এর মাজারের উদ্দেশ্যে। সেখানে যেতে মনে হয় ১০ মিনিটের মত সময় লেগেছিলো। সেখানে গিয়ে আমাদের সাথের একটা মেয়ে হটাৎ করেই অসুস্থ হয়ে পড়ে। তাই সেখানে প্রায় ১ ঘন্টার মত সময় কাটানো হয়। সেখানেও অনেক ঘুড়া ফেরা করি। এমন পবিত্র স্থানে ভ্রমন করতে পেরে আসোলেই অনেক ভালো লাগছিলো।
এর পর আমরা রওনা দিই আমাদের মেইন গন্তব্যের উদ্দেশে বিছানাকান্দি। আল্লাহ!!!! এত সুন্দর রাস্তা! আমি বলে বুঝাতে পারবো না। এতটা সুন্দর হয় আমাদের প্রকৃতি। রাস্তায় আমাদের বাস ছাড়া আর কিছুই ছিলো না। একদম শান্ত একটা রাস্তা ছিলো। তাই আমি এই রাস্তাটার নাম দিই "শান্ত"। সবুজ রঙের একটা রাস্তা।
আমরা এমন একটা জায়গাতে গিয়ে পৌছায় যেখান থেকে বিছানাকান্দি আরো সাত কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। তো আমরা এখন আর বাসে করে যেতে পারবো না। কারন, সেখানকার রাস্তা অনেক খারাপ ছিলো। তাই আমরা সেখান থেকে পিকাপ ভাড়া করি। আবার কেও কেও গিয়েছিলো বাইক দিয়ে। সেখানে বাইক দিয়ে যাওয়ার একটা সুন্দর ব্যবস্থা ছিলো। তো আমরা যে পিকাপে যাচ্ছিলাম সে পিকাপের ড্রাইভারটা অনেক ভালো মনের মানুষ ছিলো সে আমাদেরকে অনেক গান শুনিয়েছিলো এই সাত কিলোমিটার এর জার্নিতে। অমাহ,,,,,! আমি দেখি একটা মানুষের নাম বলতে ভুলেই গিয়েছি। সে মানুষ টা হলো "হামীম ভাই" আমাদের বড় ভাই ছিলো সে। অনেক কাছের একজন বড় ভাই। আমি আর সে পুরোটা জার্নিতে প্রায় এক সাথেই ছিলাম। অনেক ভালো মনের একজন মানুষ ছিলো হামীম ভাই।
তো অনেক জার্নির পর ফাইনালি গিয়ে পৌছালাম বিছানাকান্দিতে। আল্লাহ! আমি বিশ্বাস করতে পারিনি দেখে। প্রথমে আমি ভেবেছিলাম উপরে যা দেখা যাচ্ছে ঐসব মেইবি মেঘ। পরে কাছে গিয়ে দেখি ঐগুলো অনেক বড় বড় পাহাড়৷ প্রত্যেকটা পাহাড় সব গুলো পাহাড়ের সাথে জড়িত ছিলো। প্রায় ১০/১৫ কিলোমিটার এর মত চওরা- লম্বা হবে। পাহাড় দেখে আমার বোকা মন পাহাড়ে যাওয়ার জন্যে উতলা হয়ে পড়ে। কিছুক্ষন পর স্যার এসে বললো পাহাড়ে যাওয়া যাবে না। কারন, সেখানে রয়েছে ভয়ংকর মানুষ খেকো পশু, সেখানে রয়েছে বাংলাদেশ আর ভারতের সীমান্ত। ভারত সারাজীবন বাংলাদেশকে ব্যবহার করেছে তাই আমি ভারতের সীমান্তে মূত্র বিসর্জন দিয়ে এসেছিলাম🤣🥴। পাহাড়ে যেতে পারিনি তার জন্যে অনেক খারাপ লেগেছিলো। বিছানাকান্দির লেকে পানি আসে ভারত মহাসাগর থেকে। সেখান থেকে গোসল করলাম সবাই। অনেকেই সেখানে ছবি তুলেছিলো। আর আমিও ছবি তুলেছিলাম কিন্তু আমার একটা ছবি বাদে সব গুলো ছবি ডিলিট হয়েগিয়েছে। যার জন্যে আমি অনেক কষ্ট পেয়েছিলাম। যাক সেটা কোন ব্যাপার না। আমি আবার সেখানে যাবো, আমার ইচ্ছে আছে।
গোসল করার পর সেখানে বড় ধরনের একটা Lunch হলো৷ লাঞ্চ করার পর সেখান থেকে ঠিক বিকেল বেলা রওনা দিলাম, সাতক্ষীরার উদ্দেশ্যে। কিন্তু কোন একটা কারনে সেখানে যাওয়া হয়নি। কোন ব্যাপার না। যাওয়া যাবে।🥳
তো এখন রওনা দিলাম বাড়ির দিকে। অবশেষে রাত ১টায় বাড়িতে এসে পৌছোলাম। বাড়িতে এসেই সারাদিনের ক্লান্তি শেষ করার জন্যে আবার গোসল করে হালকা কিছু খেয়ে কয়েক ঘন্টার একটা তরতাজা ঘুম দিলাম।
--------------------------------------------------------------------------
My name is Ripon and I live, I don't survive.
Comments
Post a Comment