হয়তোবা এভাবে আর কোনোদিন আমার জন্মদিন পালন করা হবে না।
কোনো হবে না সেটাই বলবো আজ!
আজ আমার বয়স ২১ বছর ২দিন চলছে। গত অগাষ্ট ২ তারিখ আমার ২১তম জন্মদিন গেলো। প্রতিবারের মত এবারেও নিজের জন্য গিফট করলাম।
ভেবেছিলাম এবার আমি, রিদয়, আর এনামুল মিলে ঘুড়তে যাবো। কিন্তু রিদয় আর এনামুল ইন্ডিয়া নিয়ে বিজি আছে। ওরা চাইলেও যেতে পারবে না। তাই ১০ দিন আগেই ট্রেনের টিকিট কেটে আমি রেডি। আমি ছোট বেলা থেকেই ঘুড়তে যাওয়ার পাগল কিন্তু আব্বা আম্মা দিতো না ঘুড়তে যাওয়ার জন্য। কিন্তু আমার তো শখ রয়েই গেলো। তাই ঘুড়তে যাওয়ার নাম আসলেই আমি অনেক বেশি এক্সাইডেট হয়ে যাই। আমার রাতে ঘুম হয় না। নরমালি আমরা বন্ধুরা ঘুড়তে গেলে হঠাৎ রাত ৯টার পরে প্লান হয় কথার মধ্যে থেকেই। সাথে সাথে রাতের ট্রেনে বেড়িয়ে যাই বাড়ি থেকে ডেস্টিনেশানের উদ্দেশ্য। তো এবার অনেক দিন ওয়েট করা লাগছে তবুও ১০ দিন অপেক্ষার পরে চলে গেলাম রাতে উপবন এক্সপ্রেস দিয়ে ভৈরব থেকে সিলেটের উদ্দেশ্য।
অবশেষে ১ ঘন্টা পরে ট্রেন আসলো। আমি ভাবছিলাম সারারাত জানালার পাশে বসে যাবো কিন্তু গিয়ে দেখি আমার সিট করিডরে পরলো! আমি তো জানালার সিটই সিলেক্ট করেছিলাম। যাক, সাথে এক পিচ্ছিকে বসিয়ে সারারাতের যাত্রা শুরু।আমার সাথে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ৯জন ছেলে। অনেক আড্ডা আর গান নিয়ে সারা রাত জার্নি করে ভোর ৫টায় গিয়ে পৌছালাম সিলেট রেলওয়ে স্টেশনে। অনেক্ষন সেখানে ঘুড়ে ঘুড়ে জায়গাটা ভালোমত দেখলাম কিন্তু সিলেট গেটের সামনে ছবি তুলতে পারিনি। আমি ছবি তুলতে গিয়ে দেখি অনেকেই ছবির সিরিয়াল দিয়ে দাড়িয়ে আছে তাই আমি আর যাইনি। সেখানে অনেক মেয়ে ছিলো তাই না যাওয়ার আরো বড় একটা কারন পেয়ে গেলাম।
সকালের আলো ফোটার পরেই বেরিয়ে গেলাম সিলেট রেলওয়ে স্টেশান থেকে। বাহিরে গিয়ে অপেক্ষা করছিলাম বাসের জন্য । পরে শুনলাম বাস আসবে সকাল ৮টার পরে। পরলাম ঝামেলায়! মানে আমার ৩ ঘন্টা অপেক্ষা করা লাগবে। পরে রাস্তায় কিছুক্ষন দাড়িয়ে থাকলাম। এখানে আমার একটা শিক্ষা হলোঃ একা একা ঘুড়তে গেলে সেই জায়গা সমপর্কে ভালোমত ধারনা নিতে হয় এবং টাকা বেশি রাখতে হয় ।
কিছুক্ষন পর আমার রাতের ট্রেনের সঙ্গীরা আসলো। আর তারা আমায় দেখে আমাকে ডাকদিলো তাদের সাথে যাবো কিনা। আমি ডাক পেয়ে সাথে সাথে চলে গেলাম তাদের সাথে। মানে, আজকে সারাদিন তাদের সাথে ঘুড়া হবে। আমি তো অনেক হ্যাপি মনে মনে। আমার খুশি দেখে কে?! জীবনের বাকেট লিস্ট থেকে আরো একটা উয়িস পূরণ হতে যাচ্ছে! অচেনা মানুষের সাথে ঘুড়তে যাওয়ার ইচ্ছেটা পূরণ হয়ে গেলো।
সিলেটের সব কিছু শুরুঃ আমাদের টিম লিডারের নাম ছিলো গোলাম রাব্বানি। সে একটা লেগুনা ভাড়া করলো সিলেট রেলওয়ে স্টেশন থেকে আম্বরখানা নামের একটা বিশাল বিখ্যাত জায়গায় যাওয়ার জন্য। সেখানে থেকেই সমস্ত গাড়ি পাওয়া যাবে। আমি গাড়িতে উঠে তাদের সাথে নিজেকে পরিচিত করলাম। এর পর আমাদের যাত্রা শুরু আম্বর খানা যাওয়ার জন্য। সেখানে গিয়ে লেগুনা থেকে ১০জন নেমে কিছুক্ষন দাড়িয়ে থাকলাম। তারা সবাই ছবি তুলছিলো। আমি এতটাও ছবি প্রেমি না তাই আমি ছবির থেকে দূরেই থাকলাম।
মাজারে কিছুক্ষন থেকে বাহিরের হোটেল থেকে সকালের নাস্তা শেষ করি। প্রচুর খিদা লেগেছিলো। চাইলেই একা একা খেতে পারবো না। সাথে আরো ৯জন আছে। পরে মাজারের বাহিরের হোটেল থেকেই সকালের পরোটা নাস্তা শেষ করে রওনা দিই রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্টের জন্য।
রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্টেঃ যাওয়ার রাস্তাটা এতপরিমানে সুন্দর! আমার ফোনের ক্যামেরা এতটা ভালোনা আর লেগুনা থেকে ভালো করে ভিডিও করা যায় না। আমি রাস্তাটা অনেক উপভোগ করেছি। ২০১৯ সালে বিছানাকান্দি যাওয়ার সময় একটা সবুজ রাস্তা দিয়ে বাসে করে গিয়েছিলাম! আমার চোখে সেই রাস্তাটা এখনো লেগে আছে। কত সুন্দর ছিলো রাস্তাটা!
প্রায় ২ ঘন্টা জার্নি করার পর অবশেষে রাতারগুলে পৌছালাম। অফসিজনে গিয়েছি এতটা সৌন্দর্য পাইনি আমরা। এর পরেও অনেক ভালো লেগেছে। সেখানে গিয়ে ১৬০০ টাকায় ২টা নৌকা নিলাম ১০ জন। শুরু করলাম ফরেস্টের ভেতর যাত্রা। অনেক রোদ ছিলো তাই মাথায় গামছা দিয়ে নিয়েছিলাম যাতে রোদ কম লাগে। যদি গামছা না নিতাম তাহলে আমার অবস্থা খারাপ হয়ে যেতো। ভেবেছিলাম ভেতরে সবুজ হবে। কিন্তু বৃষ্টির সিজনে যাইনি বলে জঙ্গল সবুজ থাকেনি। কিন্তু যা মজা করেছি এখানে! বলে বুঝানো পসিবল না।
রাতারগুল শেষ করেই রওনা দিলাম দ্যা গ্রেট সাদা পাথরে যাওয়ার জন্য।
প্রায় ১ ঘন্টার জার্নি করে চলে গেলাম সাদা পাথরের দেশেঃ
যাওয়ার পথে এত সুন্দর রাস্তা দেখেছি কি আর বলবো। মন চেয়েছিলো রাস্তাতেই বসে থাকি। রাস্তা থেকে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের পাহাড় দেখা যাচ্ছিলো! এত সুন্দর দেখাচ্ছিলো যা বলে বুঝানো যাবে না। মোবাইলে যতটুকু ক্যাপচার করতে পেরেছি তাই করেছি।
অবশেষে সাদা পাথরে গিয়ে পৌছালাম। তবে মেইন স্পট হচ্ছে সাদা পাথর জিরো পয়েন্ট। এইখানে মেজোরাম পাহার থেকে সাদা পাথর ঝর্নার পানির সাথে ভেসে আসে তাই এই জায়গার নাম সাদা পাথর। এখানের ঝর্নার পানি অনেক ঠান্ডা তবে এক্সাইটমেন্টের জন্য ঠান্ডা এতটাও অনুভব হয় না। শরীর আর মন এই ঠান্ডা পানি একদম ঠান্ডা করে দেয়। বসে থাকতে ভালোই লাগে। পানির স্রোত এতবেশি যে বসে থাকা মুসকিল! পানি একদম ভাসিয়ে নিয়ে চলে যায়।
আমি আমার জীবনটাকে খুলে ইন্জয় করি। আমি একটাদিনও নষ্ট করতে চাই না। আমি একা ঘরে বসে থাকলেও সেটা ইন্জয় করি। আমি প্রতিটা দিনকে স্পেশাল বানানোর জন্য কোনো না কোনো কারন খুজে বের করি। যেমন আজকে আমি এই স্টোরি লিখতে লিখতে Netflix থেকে Never Have I Ever ওয়েবসিরিজ দেখতেছি। পিসিতে ট্রাভেল স্টোরি লিখতেছি আর মোবাইলে সিরিজ দেখতেছি। আমি কোনো ভাবেই সারভাইব করতে চাইনা আমি সুন্দর ভাবে বাচতে চাই।
Comments
Post a Comment